সমাসের পরিচিতি
সমাস কথাটির অর্থ সংক্ষেপণ, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থের দিক থেকে মিল আছে এমন দুই বা ততোধিক শব্দ বা পদ মিলে একশব্দ হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। যেমন- বিলাত থেকে ফেরত = বিলাতফেরত
সমস্তপদ
সমাস এর সাহায্যে বহুপদ থেকে যে একপদটি গঠিত হয় তাকে সমস্তপদ বলে। যেমন, বিলাতফেরত।
পূর্বপদ
সমস্তপদকে বিশ্লেষণ করলে প্রথমে যে পদটি পাওয়া যায় তাকে পূর্বপদ বলে। যেমন, বিলাত।
পরপদ
সমস্তপদকে বিশ্লেষণ করলে শেষ যে পদ পাওয়া যায় তাকে পরপদ বা উত্তরপদ বলে। যেমন, ফেরত।
ব্যাসবাক্য
সমস্তপদকে বিশ্লেষণ করার জন্য যে বাক্যের প্রয়োজন হয় তাকে ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহ বাক্য বলে। যেমন, বিলাত থেকে ফেরত।
নিচের রেখা চিত্রটি লক্ষ কর →
সমাসের শ্রেণীবিভাগ
সমাস ছয় প্রকার। যথা-
১.দ্বন্দ্ব সমাস;
২.কর্মধারয় সমাস;
৩.দ্বিগু সমাস;
৪.বহুব্রীহি সমাস;
৫.তৎপুরুষ সমাস;
৬.অব্যয়ীভাব সমাস।
দ্বন্দ্ব সমাস
পূর্বপদ ও পরপদ উভয় পদের অর্থ প্রাধান্য বজায় রেখে এবং সংযোজক অব্যয়ের লোপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এখানে 'এবং', 'ও', 'আর', ইত্যাদি সংযোজক অব্যয় ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণঃ
দম্পতি→ দম্ (জায়া) ও পতি
মাতা ও পিতা→ মাতাপিতা
জনমানব→ জন ও মানব
সৈন্যসামন্ত→ সৈন্য ও সামন্ত
হিতাহিত→ হিতা ও অহিত
আমরা→ সে, তুমি ও আমি
আজকাল→ আজ ও কাল
সাতসতের→ সাত ও সতের
অত্যাচার-অবিচার→ অত্যাচার ও অবিচার
দেওয়া-নেওয়া→ দেওয়া ও নেওয়া
দেখাশোনা→ দেখা ও শোনা
ভালোমন্দ→ ভালো ও মন্দ
রক্তমাংস→ রক্ত ও মাংস
লেনদেন→ লেন ও দেন
দুধেভাতে→ দুধে ও ভাতে
পথেপ্রান্তরে→ পথে ও প্রান্তরে
বনেবাদাড়ে→ বনে ও বাদাড়ে
সাপে-নেউলে→ সাপে ও নেউলে
হাতেপায়ে→ হাতে ও পায়ে
অহিনকুল→ অহি ও অনুকূল
ক্ষুৎপিপাসা→ ক্ষুধা ও পিপাসা
তালতমাল→ তাল ও তমাল
হতাহত→ হত ও আহত
তোমরা→ সে ও তুমি
সত্যাসত্য→ সত্য ও অসত্য
কর্মধারয় সমাস
বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের সমাস হয় এবং যেখানে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। এখানে ব্যাসবাক্যের মধ্যে 'যে' শব্দটি বসে। আবার ব্যাসবাক্যে যে, সে, যিনি, তিনি, যা, তা ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণঃ
নীলচে পদ্ম পদ্ম→নীলপদ্ম
নবপৃথিবী→ নব যে পৃথিবী
নবযৌবন→ নব যে যৌবন
ক্রীতদাস→ক্রীত যে দাস
কদাকর→কু যে আকার
নীলাকাশ→নীল যে আকাশ
প্রাণচঞ্চল→ চঞ্চল যে প্রাণ
বেগুনভাজা→ ভাজা যে বেগুন
মহাজন→ মহা যে জন
মহাপৃথিবী→ মহা যে পৃথিবী
লালফুল→ লাল যে ফুল
সজ্জন→ সৎ যে জন
গণ্যমান্য→যিনি গণ্য তিনি মান্য
গিন্নিমা→ যিনি গিন্নি তিনি মা
মিঠাকড়া→ যা মিঠা তাই কড়া
মৃদুমন্দ→ যা মৃদু তাই মন্দ
জজসাহেব→ যিনি জজ তিনি সাহেব
নবান্ন→ নব যে আন্ন
ষড়যন্ত্র→ ষড় যে যন্ত্র
কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিভাগ
কর্মধারয় সমাস চারপ্রকার। যথা-
- মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
- উপমান কর্মধারয় সমাস
- উপমিত কর্মধারয় সমাস
- রুপক কর্মধারয় সমাস
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
ব্যাসবাক্যের মাঝের পদ লোক পেয়ে যে কর্মধারয় সমাস হয় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে।
উদাহরণঃ
সিংহাসন→ সিংহ চিহ্নিত আসন
জ্যােৎস্নারাত→ জ্যােৎস্না শোভিত রাত
সন্ধ্যাপ্রদীপ→ সন্ধ্যা বেলার জ্বালানো প্রদীপ
শিক্ষামন্ত্রী→ শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী
উর্ণাজাল→ উর্ণা নির্মিত জাল
খেয়াঘাট→ খেয়া পারাপারের ঘাট
গণতন্ত্র→ গণ নিয়ন্ত্রিত তন্ত্র
জয়পতাকা→ জয়সূচক পতাকা
জয়মুকুট→ জয়সূচক মুকুট
জীবনবীমা→ জীবন আশাঙ্কায় বীমা
ডাকবার্তা→ ডাক প্রেরিত বার্তা
দুধভাত→ দুধ মিশ্রিত ভাত
ধর্মকর্ম→ ধর্ম বিহিত কর্ম
ধর্মকার্য→ ধর্ম বিহিত কার্য
ধর্মঘট→ ধর্ম রক্ষার্থে ঘট
পলান্ন→ পল মিশ্রিত অন্ন
প্রাণভয়→ প্রাণ হারানোর ভয়
বরযাত্রী→ বর অনুগত যাত্রী
বিরানব্বই→ বি অধিক নব্বই
মমতারস→ মমতা মিশ্রিত রস
মৌমাছি→ মৌ আশ্রিত মাছি
রক্তকমল→ রক্ত বর্ণের কমল
ঘরজামাই→ঘরে আশ্রিত জামাই
বৌভাত→ বৌ পরিবেশিত ভাত
উপমান কর্মধারয় সমাস
একটি বিশেষ্য পদের সাথে একটি বিশেষণ পদের তুলনা করে যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।
উদাহরণঃ
মিশকালো→ মিশির ন্যায় কালো
কচুকাটা→ কচুর মত কাটা
কাজলকালো→ কাজলের ন্যায় কালো
কুসুমকোমল→ কুসুমের ন্যায় কোমল
তুষারশীতল→ তুসারের ন্যায শীতল
ভিখারিদশা→ ভিখারির ন্যায় দশা
বজ্রকন্ঠ→বজ্রের ন্যায় কন্ঠ
শশব্যস্ত→ শশের ন্যায় ব্যাস্ত
উপমিত কর্মধারয় সমাস
একটি বিশেষ্য পদের সাথে একটি বিশেষ্য পদের তুলনা করে যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।
উদাহরণঃ
বাহুলতা →বাহু লতার ন্যায়
চাঁদমুখ→ চাঁদের ন্যায় মুখ
প্রাণপ্রিয়→ প্রাণের ন্যায় প্রিয়
মুখচন্দ্র→ মুখ চন্দের ন্যায়
ফুলকুমারি→ কুমারী ফুলের ন্যায়
রক্তকমল→ রক্ত কমলের ন্যায়
চরণকমল→ চরন কমলের ন্যায়
পুরুষসিংহ→ পুরুষ সিংহের ন্যায়
চাঁদবদন→ চাঁদের ন্যায় বদন
রুপক কর্মধারয় সমাস
যে কর্মধারয় সমাসে বাস্তব বস্তুর সাথে কল্পনার কিছু তুলনা করা হয় তাকে রুপক কর্মধারয় সমাস বলে। এ সমাসে ব্যাস বাক্যের মধ্যে 'রুপ' শব্দ থাকবে।
উদাহরণঃ
যৌবনসূর্য→ যৌনের রুপ সূর্য
কালসিন্ধু→ কার রুপ সিন্ধু
জীবনকারি→ জীবন রুপ কারি
জীবননন্দী→ জীবন রুপ নন্দী
দিলদরিয়া→ দিল রুপ দারিয়া
পরানপাখি→ পরান রুপ পাখি
বিষাদসিন্ধু→ বিষাদ রুপ সিন্ধু
মনমাঝি→ মন রুপ মাঝি
ভবনদী→ ভব রুপ নদী
মোহনিদ্রা→ মোহ রুপ নিদ্রা
শোকানল→ শোকা রুপ অনল
সংসারসমুদ্র→ সংসার রুপ সমুদ্র
বিদ্যাধন→ বিদ্যা রুপ ধন
জীবনপ্রদীপ→ জীবন রুপ প্রদীপ
দ্বিগু সমাস
যে সমাসে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে বসে সমাহার (যোগফল) বোঝায়৷ এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য পায় তাকে দ্বিগু সমাস বলে।
উদাহরণঃ
নবরত্ন→নব রত্নের সমাহার
তেপান্তর→ তে প্রান্তরের সমাহার
সেতার→ সে তারের সমাহার
তেপায়া→ তে পায়ার সমাহার
তেমাথা→ তে মাথার সমাহার
ত্রিফলা→ ত্রি ফলার সমাহার
ত্রিলোক→ ত্রি লোকের সমাহার
শতাব্দী→ শত অব্দের সমাহার
সপ্তাহ→ সপ্ত অহের সমাহার
সপ্তর্ষি→ সপ্ত ঋষির সমাহার
চতুর্দশপদী→ চতুর্দশ পদের সমাহার
পঞ্চবটী→ পঞ্চ বটের সমাহার
ত্রিভুজ→ ত্রি ভুজের সমাহার
দুআনি→ দু আনার সমাহার
বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদ দুটির কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্য কোনো অর্থ বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন,
বীণাপাণি→বীনা পানিতে যার।
এখানে বীনা (বাঁশি) ও পাণি (হাত) কোনটাই না বুঝিয়ে দেবী সরস্বতী কে বোঝানো হয়েছে। এ সমাসে যে, যার, যাতে ইত্যাদি ব্যাসবাক্যে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণঃ
অল্পপ্রাণ→ অল্প প্রাণ যার
আশীবিষ→ আশিতে বিশ যার
একচোখা→ একদিকে চোখ যার
উর্ণনাভ→ উর্ণা নাভিতে যার
মন্দভাগ্য→ মন্দভাগ্য যার
কমবখত কম বখত যার
ক্ষরধারা→ ক্ষরের ধারা যার
তিমিরকুন্ডালা→ তিমিরের ন্যায় কুন্ডল যার
গল্পপ্রেমিক→ গল্পে প্রেম যার
চন্দ্রচুড়→ চন্দ্র চুড়ায় যার
দশানন→ দশ আনন যার
গায়েহলুদ→ গায়ে হলুদ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে
দোভাষী→ দো ভাষা আয়াত্তে যার
নদীমাতৃক→ নদী মাতা যার
নীলকন্ঠ→ নীর কন্ঠ যার
পর্দাপ্রিয়→ পর্দা প্রিয় যার
বিপত্নীক→ বি পত্নী যার
বিমনা→ বিচলিত মন যার
সতীর্থ→ সমান তীর্থ যাদের
সহোদর→ সমান উদর যাদের
সুহৃদ→ সুন্দর হৃদয় যার
শৌখিন→ শখ আছে যার
স্বল্পপ্রাণ→ স্বল্প প্রাণ যার
সদর্প→ দর্পের সঙ্গে বর্তমান
বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণিবিভাগ
বহুব্রীহি সমাস দুই প্রকার। যথা-
- ব্যাতিহারব বহুব্রীহি সমাস
- নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস
ব্যাতিহার বহুব্রীহি সমাস
যে বহুব্রীহি সমাসে দুটি একরূপ শব্দ দিয়ে এক জাতীয় কাজ বোঝায় তাকে ব্যাতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে। এ সমাসে পূর্বপদে 'আ' এবং পরপদে 'ই' যুক্ত হয়।
উদাহরণঃ
হাতাহাতি→ হাতে হাতে যে লড়াই
কানাকানি→ কানে কানে যে কথা
কোলাকোলি→ কোলে কোলে যে মিলন
গলাগলি→ গলায় গলায় যে মিলন
রক্তারক্তি→ রক্তপাত করে যে যুদ্ধ
লাঠালাঠি→লাঠিতে লাঠিতে যে লড়াই
হাসাহাসি→হাসিতে হাসিতে যে ক্রিয়া
নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস
নঞর্থক অব্যয পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে বহুব্রীহি সমাস হয় তাকে নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস বলে। এ সমাসে ব্যাসবাক্যের পূর্বে 'নয়', 'নেই' ইত্যাদি পদ ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণঃ
বেওয়ারিশ→ নেই ওয়ারিশ যার
অনার্শ্রিত→ নেই আশ্রয় যার
অনৈক্য→ নেই অক্য যার
বেহায়া→ নেই হায়া যার
বেতার→ নেই তার যার
নিরর্থক→ নেই অর্থ যাতে
অবিশ্বাস্য→ নয় বিশ্বাসযোগ্য যা
অনভিজ্ঞ→ নয় অভিজ্ঞ যে
নিরক্ষর→ নেই অক্ষরজ্ঞান যার
তৎপুরুষ সমাস
যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রধান বলে বিবেচিত হয় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন,
ধানক্ষেত→ ধানের ক্ষেত
তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিভাগ
তৎপুরুষ সমাস আট প্রকার। যথা-
- দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
- তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
- চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
- পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
- ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
- সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
- উপপদ তৎপুরুষ সমাস
- নঞ তৎপুরুষ সমাস
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে, ধরে) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।
উদাহরণঃ
আমকুড়ানো→ আমকে কুড়ানো
দেশবিভাগ→ দেশকে বিভাগ
দেশভঙ্গ→ দেশকে ভঙ্গ
দেশত্যাগ→ দেশকে ত্যাগ
পৃষ্ঠপ্রদর্শন→ পৃষ্ঠকে প্রদর্শন
বিস্ময়াপন্ন→ বিস্ময়কে আপন্ন
রথচালন→ রথকে চালক
শরনিক্ষেপ→ শরকে নিক্ষেপ
চিরসুখী→ চিরকাল ধরে সুখী
ক্ষনস্থায়ী→ ক্ষনকাল ধরে স্থয়ী
তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক) লোপ যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।
উদাহরণঃ
ছায়াশীতল→ ছায়া দ্বারা শীতল
পুষ্পাঞ্জলী→ পুষ্প দিয়ে অঞ্জলি
ঘিভাজা→ ঘি দিয়ে ভাজা
জনাকীর্ণ→ জন দ্বারা আকীর্ণ
জলসেচন→ জল দ্বারা সেচন
ঢেঁকিছাটা→ ঢেঁকি দ্বারা ছাটা
ন্যায়সঙ্গত→ ন্যায় দ্বারা সঙ্গত
পদদলিত→ পদ দ্বারা দলিত
বাকবিতন্ডা→ বাক দ্বারা বিতন্ডা
মেঘলুপ্ত→ মেঘ দ্বারা লুপ্ত
মনগড়া→ মন দ্বারা গড়া
যুক্তিসঙ্গত→ যুক্তি দ্বারা সঙ্গত
শোকার্ত→ হোক দ্বারা আর্ত
শ্রমলব্ধ→ শ্রম দ্বারা লব্ধ
জ্ঞানশূন্য→ জ্ঞান দ্বারা শূন্য।
চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদের বিভক্তি (কে, রে) এবং (নিমিত্ত, তবে, জন্য) চিহ্ন লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে।
উদাহরণঃ
দেবদত্ত→ দেবকে দত্ত
তপোবন→ তপের নিমিত্ত বন
বিয়েপাগলা→ বিয়ের জন্যে পাগলা
রান্নাঘর →রান্নার জন্যে ঘর
সেচনকলস→ সেচনের নিমিত্ত কলস
হজযাত্রা→ হজের জন্যে যাত্রা
ছাত্রাবাস→ ছাত্রদের জন্যে আবাস
মুক্তিযুদ্ধ→ মুক্তির জন্যে যুদ্ধ।
পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে, চেয়ে) চিহ্ন লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে।
উদাহরণঃ
দেশপলাতক→ দেশ থেকে পলাতক
মুখভ্রষ্ট→ মুখ থেকে ভ্রষ্ট
মেঘমুক্ত→ মেঘ থেকে মুক্ত
যুদ্ধবিরতি→ যুদ্ধ থেকে বিরতি
জন্মান্ধ→ জন্ম হতে অন্ধ
স্বর্গভ্রষ্ট→ স্বর্গ থেকে ভ্রষ্ট
ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) চিহ্ন লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে।
উদাহরণঃ
পুষ্পসৌরভ→ পুষ্পের সৌরভ
উপলখণ্ড→ উপলের খন্ড
কর্মকর্তা→ কর্মের কর্তা
কবিগুরু→ কবিদের গুরু
খেয়াঘাট→ খেয়ার ঘাট
গল্পপ্রেমিক→ গল্পের প্রেমিক
গৃহকর্মী→ গৃহের কর্মী
চা বাগান→ চায়ের বাগান
জীবনসঞ্চার→ জীবনের সঞ্চার
ঝর্ণাধারা→ ঝরনার ধারা
নবীনবরণ→ নবীনদের বরণ
পাষাণস্তুপ→ পাষাণণের স্তপ
প্রাণবধ→ প্রাণের বধ
বিধিলিপি→ বিধির লিপি
ভারার্পণ→ ভারের অর্পন
ভুজবল→ ভুজের বল
মনমধ্যে→ মনের মধ্যে
বনমধ্যে→ বনের মধ্যে
বজ্রসম→ বজ্রের সম
মামাবাড়ি→ মামার বাড়ি
মার্তন্ডপ্রায়→ মার্তন্ডের প্রায়
মৃঘ শিশু→ মৃঘের শিশু
রাজদন্ড→ রাজার দ্ন্ড
রাজনীতি→ রাজার নীতি
রাজপথ→ পথের রাজা
রাজহংস→ হংসের রাজা
সুখ সময়→ সুখের সময়
ছাগদুগ্ধ→ ছাগীর দুগ্ধ
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) চিহ্ন লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে।
উদাহরণঃ
অকালপক্ব→ অকালে পক্ক
অকালমৃত্যু→ অকালে মৃত্যু
গাছপাকা→ গাছে পাকা
বনভোজন→ বনে ভোজন
তমাসাচ্ছন্ন→ তমসায় আচন্ন
রথারোহন→ রখে আরোহন
সলিল সমাধি→ সলিলে সমাধি
ভূতপূর্ব→ পূর্বে ভূত
মনমরা→ মনে মরা
নরাধম→ নরে অধম
উপপদ তৎপুরুষ সমাস
কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। এ সমাসে ব্যাসবাক্যের শেষে 'যে' বা 'যা' বসে।
উদাহরণঃ
ইন্দ্রজিৎ→ ইন্দ্রকে জয় করেছে যে
ক্ষীণজীবী→ ক্ষীণভাবে বাঁচে যে
গায়েপড়া→ গায়ে পড়ে যে
গৃহস্থ→ গৃহে থাকে যে
জাদুকর→ জাদু করে যে
তিমিরবিদারী→ তিমির বির্দী করে যে
পকেটমার→ পকেট মারে যে
প্রিয়ংবদা→ প্রিয় কখা বলে যে
বাস্তুহারা→ বাস্তু হারিয়েছে যে
মৃত্যুঞ্জয়→ মৃত্যুকে জয় করেছে যে
সত্যবাদী→ সত্য কথা বলে যে
নঞ তৎপুরুষ সমাস
পূর্ব পদে না-বাচক অব্যয় (না, নেই, নয়) ব্যবহৃত হয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে। সমস্তপদের পূর্বে অ, অন, অনা, আ, গর, ন, নি, বি, বে ইত্যাদি অব্যয় থাকে।
উদাহরণঃ
অক্ষত→ নয় ক্ষত
অকাতর→ নয় কাতর
অনতিবৃহৎ→ নয় অতিবৃহৎ
অনশন→ নয় অশন
অনর্থ→ নয় অর্থ
অনাচার→ নয় আচার
অনাশক্ত→ নয় আসক্ত
অনাহার→ নয় আহার
অনেক→ নয় এক
অনৈক্য→ নয় ঐক্য
অপর্যাপ্ত→ নয় পর্যাপ্ত
অসত্য→ নয় সত্য
অস্থির→ নয় স্থির
নিরর্থক→ নয় অর্থক
নামঞ্জুর→ নয় মঞ্জুর
বেহিসাবি→ নয় হিসাবি
অব্যয়ীবাব সমাস
অব্যয় শব্দের পূর্বে বসে যে সমাস হয় এবং পূর্ব পদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। এখানে পূর্বপদে অব্যয় বা উপসর্গ এবং পরপদে বিশেষ্য থাকে।
উদাহরণঃ
অতিমাত্র→ মাত্রাকে অতিক্রান্ত
অনুগমন→ পশ্চাৎ গমন
অমিল→ মিলের অভাব
আকর্ণ→ কর্ণ পর্যন্ত
আজীবন→ জীবন পর্যন্ত
আমল→ মূল পর্যন্ত
আপাদমস্তক→ পা থেকে মাথা পর্যন্ত
আলুনি→ নুনের অভাব
উদ্বেল→ বেলাকে অতিক্রান্ত
উপকণ্ঠ→ কণ্ঠের সমীপে
উপজেলা→ জেলার ক্ষুদ্রে
দুর্ভিক্ষ→ ভিক্ষার অভাব
নির্বিঘ্ন→ বিঘ্নের অভাব
প্রতিক্ষণ→ ক্ষণে ক্ষণে
প্রতিচ্ছবি→ ছবির সদৃশ
প্রতিদান→ দানের বিপরীত
প্রতিতামহ→ পিতামহের পূর্ববর্তী
বিশ্রী→ শ্রীর অভাব
মাথাপিছু→ প্রতি মাথা
যথারীতি→ রীতিকে অতিক্রম না করে
যথাসাধ্য→ সাধ্যকে অতিক্রম না করে
যথাবিধি→ বিধিকে অতিক্রম না করে
হরতাল→ তালের অভাব
হররোজ→ রোজ রোজ
হাভাত→ ভাতের অভাব
নিত্য সমাস
পূর্বে 'অন্য', 'কেবল' বসে।
উদাহরণঃ
কালান্তর→ অন্যকাল
গৃহান্তর→ অন্য গৃহ
গ্রামান্তর→ অন্য গ্রাম
দেশান্তর→ অন্য দেশ
দ্বীপান্তর→ অন্য দ্বীপ
বাক্যান্তর→ অন্য বাক্য
তন্মাত্র→ কেবল মাত্র
প্রাদি সমাস
পূর্বে 'প্র', 'উৎকৃষ্ট' বা 'ভা' বসে।
উদাহরণঃ
প্রগতি→ প্র গতি
প্রভাত→ প্র ভাত
প্রবচন→ প্র বচন
প্রভাব→ প্র ভাব