তৎপুরুষ সমাস -Study Stories

তৎপুরুষ সমাস

তৎপুরুষ সমাস

যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রধান বলে বিবেচিত হয় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন,

ধানক্ষেত→ ধানের ক্ষেত 

তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিভাগ

তৎপুরুষ সমাস আট প্রকার। যথা-

  • দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস 
  • তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস 
  • চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
  • পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
  • ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
  • সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
  • উপপদ তৎপুরুষ সমাস
  • নঞ তৎপুরুষ সমাস  

দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে, ধরে) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণঃ

আমকুড়ানো→ আমকে কুড়ানো

দেশবিভাগ→ দেশকে বিভাগ 

দেশভঙ্গ→ দেশকে ভঙ্গ 

দেশত্যাগ→ দেশকে ত্যাগ 

পৃষ্ঠপ্রদর্শন→ পৃষ্ঠকে প্রদর্শন 

বিস্ময়াপন্ন→ বিস্ময়কে আপন্ন

রথচালন→ রথকে চালক

শরনিক্ষেপ→ শরকে নিক্ষেপ 

চিরসুখী→ চিরকাল ধরে সুখী 

ক্ষনস্থায়ী→ ক্ষনকাল ধরে স্থয়ী

তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক) লোপ যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণঃ

ছায়াশীতল→ ছায়া দ্বারা শীতল 

পুষ্পাঞ্জলী→ পুষ্প দিয়ে অঞ্জলি 

ঘিভাজা→ ঘি দিয়ে ভাজা

জনাকীর্ণ→ জন দ্বারা আকীর্ণ 

জলসেচন→ জল দ্বারা সেচন

ঢেঁকিছাটা→ ঢেঁকি দ্বারা ছাটা

ন্যায়সঙ্গত→ ন্যায় দ্বারা সঙ্গত

পদদলিত→ পদ দ্বারা দলিত  

বাকবিতন্ডা→ বাক দ্বারা বিতন্ডা

মেঘলুপ্ত→ মেঘ দ্বারা লুপ্ত 

মনগড়া→ মন দ্বারা গড়া

যুক্তিসঙ্গত→ যুক্তি দ্বারা সঙ্গত

শোকার্ত→ হোক দ্বারা আর্ত

শ্রমলব্ধ→ শ্রম দ্বারা লব্ধ

জ্ঞানশূন্য→ জ্ঞান দ্বারা শূন্য। 

চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদের বিভক্তি (কে, রে) এবং (নিমিত্ত, তবে, জন্য) চিহ্ন লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। 

উদাহরণঃ

দেবদত্ত→ দেবকে দত্ত 

তপোবন→ তপের নিমিত্ত বন 

বিয়েপাগলা→ বিয়ের জন্যে পাগলা

রান্নাঘর →রান্নার জন্যে ঘর  

সেচনকলস→ সেচনের নিমিত্ত কলস

হজযাত্রা→ হজের জন্যে যাত্রা

ছাত্রাবাস→ ছাত্রদের জন্যে আবাস

মুক্তিযুদ্ধ→ মুক্তির জন্যে যুদ্ধ। 

পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে, চেয়ে) চিহ্ন লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণঃ

দেশপলাতক→ দেশ থেকে পলাতক

মুখভ্রষ্ট→ মুখ থেকে ভ্রষ্ট

মেঘমুক্ত→ মেঘ থেকে মুক্ত

যুদ্ধবিরতি→ যুদ্ধ থেকে বিরতি 

জন্মান্ধ→ জন্ম হতে অন্ধ

স্বর্গভ্রষ্ট→ স্বর্গ থেকে ভ্রষ্ট

ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) চিহ্ন লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণঃ

পুষ্পসৌরভ→ পুষ্পের সৌরভ 

উপলখণ্ড→ উপলের খন্ড 

কর্মকর্তা→ কর্মের কর্তা

কবিগুরু→ কবিদের গুরু 

খেয়াঘাট→ খেয়ার ঘাট

গল্পপ্রেমিক→ গল্পের প্রেমিক

গৃহকর্মী→ গৃহের কর্মী  

চা বাগান→ চায়ের বাগান 

জীবনসঞ্চার→ জীবনের সঞ্চার 

ঝর্ণাধারা→ ঝরনার ধারা 

নবীনবরণ→ নবীনদের বরণ 

পাষাণস্তুপ→ পাষাণণের স্তপ

প্রাণবধ→ প্রাণের বধ

বিধিলিপি→ বিধির লিপি 

ভারার্পণ→ ভারের অর্পন

ভুজবল→ ভুজের বল

মনমধ্যে→ মনের মধ্যে 

বনমধ্যে→ বনের মধ্যে 

বজ্রসম→ বজ্রের সম

মামাবাড়ি→ মামার বাড়ি  

মার্তন্ডপ্রায়→ মার্তন্ডের প্রায়

মৃঘ শিশু→ মৃঘের শিশু 

রাজদন্ড→ রাজার দ্ন্ড

রাজনীতি→ রাজার নীতি 

রাজপথ→ পথের রাজা

রাজহংস→ হংসের রাজা

সুখ সময়→ সুখের সময় 

ছাগদুগ্ধ→ ছাগীর দুগ্ধ

সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) চিহ্ন লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণঃ

অকালপক্ব→ অকালে পক্ক

অকালমৃত্যু→ অকালে মৃত্যু

গাছপাকা→ গাছে পাকা  

বনভোজন→ বনে ভোজন

তমাসাচ্ছন্ন→ তমসায় আচন্ন

রথারোহন→ রখে আরোহন

সলিল সমাধি→ সলিলে সমাধি

ভূতপূর্ব→ পূর্বে ভূত

মনমরা→ মনে মরা 

নরাধম→ নরে অধম

উপপদ তৎপুরুষ সমাস

কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। এ সমাসে ব্যাসবাক্যের শেষে 'যে' বা 'যা' বসে।

উদাহরণঃ

ইন্দ্রজিৎ→ ইন্দ্রকে জয় করেছে যে

ক্ষীণজীবী→ ক্ষীণভাবে বাঁচে যে

গায়েপড়া→ গায়ে পড়ে যে

গৃহস্থ→ গৃহে থাকে যে

জাদুকর→ জাদু করে যে

তিমিরবিদারী→ তিমির বির্দী করে যে

পকেটমার→ পকেট মারে যে

প্রিয়ংবদা→ প্রিয় কখা বলে যে

বাস্তুহারা→ বাস্তু হারিয়েছে যে

মৃত্যুঞ্জয়→ মৃত্যুকে জয় করেছে যে 

সত্যবাদী→ সত্য কথা বলে যে 

নঞ তৎপুরুষ সমাস

পূর্ব পদে না-বাচক অব্যয় (না, নেই, নয়) ব্যবহৃত হয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে। সমস্তপদের পূর্বে অ, অন, অনা, আ, গর, ন, নি, বি, বে ইত্যাদি অব্যয় থাকে।

উদাহরণঃ

অক্ষত→ নয় ক্ষত 

অকাতর→ নয় কাতর 

অনতিবৃহৎ→ নয় অতিবৃহৎ 

অনশন→ নয় অশন

অনর্থ→ নয় অর্থ 

অনাচার→ নয় আচার 

অনাশক্ত→ নয় আসক্ত 

অনাহার→ নয় আহার 

অনেক→ নয় এক

অনৈক্য→ নয় ঐক্য 

অপর্যাপ্ত→ নয় পর্যাপ্ত 

অসত্য→ নয় সত্য 

অস্থির→ নয় স্থির 

নিরর্থক→ নয় অর্থক

নামঞ্জুর→ নয় মঞ্জুর

বেহিসাবি→ নয় হিসাবি