কর্মধারয় সমাস
বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের সমাস হয় এবং যেখানে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। এখানে ব্যাসবাক্যের মধ্যে 'যে' শব্দটি বসে। আবার ব্যাসবাক্যে যে, সে, যিনি, তিনি, যা, তা ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণঃ
নীলচে পদ্ম পদ্ম→নীলপদ্ম
নবপৃথিবী→ নব যে পৃথিবী
নবযৌবন→ নব যে যৌবন
ক্রীতদাস→ক্রীত যে দাস
কদাকর→কু যে আকার
নীলাকাশ→নীল যে আকাশ
প্রাণচঞ্চল→ চঞ্চল যে প্রাণ
বেগুনভাজা→ ভাজা যে বেগুন
মহাজন→ মহা যে জন
মহাপৃথিবী→ মহা যে পৃথিবী
লালফুল→ লাল যে ফুল
সজ্জন→ সৎ যে জন
গণ্যমান্য→যিনি গণ্য তিনি মান্য
গিন্নিমা→ যিনি গিন্নি তিনি মা
মিঠাকড়া→ যা মিঠা তাই কড়া
মৃদুমন্দ→ যা মৃদু তাই মন্দ
জজসাহেব→ যিনি জজ তিনি সাহেব
নবান্ন→ নব যে আন্ন
ষড়যন্ত্র→ ষড় যে যন্ত্র
কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিভাগ
কর্মধারয় সমাস চারপ্রকার। যথা-
- মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
- উপমান কর্মধারয় সমাস
- উপমিত কর্মধারয় সমাস
- রুপক কর্মধারয় সমাস
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
ব্যাসবাক্যের মাঝের পদ লোক পেয়ে যে কর্মধারয় সমাস হয় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে।
উদাহরণঃ
সিংহাসন→ সিংহ চিহ্নিত আসন
জ্যােৎস্নারাত→ জ্যােৎস্না শোভিত রাত
সন্ধ্যাপ্রদীপ→ সন্ধ্যা বেলার জ্বালানো প্রদীপ
শিক্ষামন্ত্রী→ শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী
উর্ণাজাল→ উর্ণা নির্মিত জাল
খেয়াঘাট→ খেয়া পারাপারের ঘাট
গণতন্ত্র→ গণ নিয়ন্ত্রিত তন্ত্র
জয়পতাকা→ জয়সূচক পতাকা
জয়মুকুট→ জয়সূচক মুকুট
জীবনবীমা→ জীবন আশাঙ্কায় বীমা
ডাকবার্তা→ ডাক প্রেরিত বার্তা
দুধভাত→ দুধ মিশ্রিত ভাত
ধর্মকর্ম→ ধর্ম বিহিত কর্ম
ধর্মকার্য→ ধর্ম বিহিত কার্য
ধর্মঘট→ ধর্ম রক্ষার্থে ঘট
পলান্ন→ পল মিশ্রিত অন্ন
প্রাণভয়→ প্রাণ হারানোর ভয়
বরযাত্রী→ বর অনুগত যাত্রী
বিরানব্বই→ বি অধিক নব্বই
মমতারস→ মমতা মিশ্রিত রস
মৌমাছি→ মৌ আশ্রিত মাছি
রক্তকমল→ রক্ত বর্ণের কমল
ঘরজামাই→ঘরে আশ্রিত জামাই
বৌভাত→ বৌ পরিবেশিত ভাত
উপমান কর্মধারয় সমাস
একটি বিশেষ্য পদের সাথে একটি বিশেষণ পদের তুলনা করে যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।
উদাহরণঃ
মিশকালো→ মিশির ন্যায় কালো
কচুকাটা→ কচুর মত কাটা
কাজলকালো→ কাজলের ন্যায় কালো
কুসুমকোমল→ কুসুমের ন্যায় কোমল
তুষারশীতল→ তুসারের ন্যায শীতল
ভিখারিদশা→ ভিখারির ন্যায় দশা
বজ্রকন্ঠ→বজ্রের ন্যায় কন্ঠ
শশব্যস্ত→ শশের ন্যায় ব্যাস্ত
উপমিত কর্মধারয় সমাস
একটি বিশেষ্য পদের সাথে একটি বিশেষ্য পদের তুলনা করে যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।
উদাহরণঃ
বাহুলতা →বাহু লতার ন্যায়
চাঁদমুখ→ চাঁদের ন্যায় মুখ
প্রাণপ্রিয়→ প্রাণের ন্যায় প্রিয়
মুখচন্দ্র→ মুখ চন্দের ন্যায়
ফুলকুমারি→ কুমারী ফুলের ন্যায়
রক্তকমল→ রক্ত কমলের ন্যায়
চরণকমল→ চরন কমলের ন্যায়
পুরুষসিংহ→ পুরুষ সিংহের ন্যায়
চাঁদবদন→ চাঁদের ন্যায় বদন
রুপক কর্মধারয় সমাস
যে কর্মধারয় সমাসে বাস্তব বস্তুর সাথে কল্পনার কিছু তুলনা করা হয় তাকে রুপক কর্মধারয় সমাস বলে। এ সমাসে ব্যাস বাক্যের মধ্যে 'রুপ' শব্দ থাকবে।
উদাহরণঃ
যৌবনসূর্য→ যৌনের রুপ সূর্য
কালসিন্ধু→ কার রুপ সিন্ধু
জীবনকারি→ জীবন রুপ কারি
জীবননন্দী→ জীবন রুপ নন্দী
দিলদরিয়া→ দিল রুপ দারিয়া
পরানপাখি→ পরান রুপ পাখি
বিষাদসিন্ধু→ বিষাদ রুপ সিন্ধু
মনমাঝি→ মন রুপ মাঝি
ভবনদী→ ভব রুপ নদী
মোহনিদ্রা→ মোহ রুপ নিদ্রা
শোকানল→ শোকা রুপ অনল
সংসারসমুদ্র→ সংসার রুপ সমুদ্র
বিদ্যাধন→ বিদ্যা রুপ ধন
জীবনপ্রদীপ→ জীবন রুপ প্রদীপ